পিপলএনটেকে ২ হাজার শিক্ষার্থী স্কলারশিপের জন্য চূড়ান্ত

Read Time:9 Minute, 11 Second

কোভিড-১৯ বিশ্ব অর্থনীতির ভীত যেমন নাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি অনেক মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারকে ফেলে দিয়েছে দুঃসহ কষ্টের মধ্যে। এমন অস্থির সময়ে বাংলাদেশে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান পিপলএনটেক গত ২৪ জুলাই ২ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ২ কোটি টাকার “কোভিড রিকোভারি স্কলারশিপ” এর ঘোষণা দেয়।প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পেতে আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে ২ হাজার শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপের জন্য চূড়ান্ত করা হয়।গত ১২ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “কোভিড রিকোভারি স্কলারশিপ ২০২০” এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হোসেনে আরা বেগম (এনডিসি), ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।ভার্চুয়াল এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (পিপলএনটেক), ফারহানা হানিপ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পিপলএনটেক), লিয়াকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক (আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ফোরাম), লায়ন মোঃ ইউসূফ খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পিপলএনটেক)।অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন পিপলএনটেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়ন মোঃ ইউসূফ। শিক্ষার্থীদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এবং প্রযুক্তি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ।অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি লিয়াকত হোসেন তার বক্তব্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা প্রযুক্তির বিপ্লবের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে গার্মেন্টস সেক্টরের ওপর। কিন্তু প্রযুক্তি খাতে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুললে সেটি আমাদের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।পিপলএনটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারহানা হানিপ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুবকর হানিপ তাদের বক্তব্যে পিপলএনটেকের নানা কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। পিপলএনটেক এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে, যাদের বেশির ভাগই মেয়ে। এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম একটি লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা সিঙ্গেল কিংবা বেকার মাদের প্রযুক্তিভিত্তিক কাজ শিখিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের পাশে দাঁড়ানো।আবুবকর হানিপ তার বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কেউ যখন ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করে এন্ট্রি লেভেলের কোন চাকরি নেয়, তখন সে বছরে সর্বোচ্চ ৪৫-৫০ হাজার ডলার আয় করতে পারে। ১০০-১২০ হাজার ডলার আয় করতে হলে তাকে ৬/৭ বছর চাকরি করতে হয়। কিন্তু পিপলএনটেক সেখানে মাত্র ৪ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের শিক্ষার্থীদের ১২০-১৪০ হাজার ডলারের চাকরি দিতে পেরেছে।শুধু ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্স ডিগ্রীধারী নয়, গৃহিণী, রেস্তোরা কর্মীদেরকে কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান আছে এমন শিক্ষার্থীদের পিপলএনটেক, রিয়েল লাইফ প্রজেক্ট নির্ভর এমন প্রশিক্ষণ দেয়, যেন তারা চাকরি পেয়েই সেই কাজটি দক্ষতার সাথে করতে পারে। মূলত কেউ এন্ট্রি লেভেলের চাকরি করলে অভিজ্ঞতার অভাবে তাকে তার সহকর্মীদের থেকে কাজ শিখে নিতে হয়। কিন্তু পিপলএনটেকের প্রশিক্ষণের যেই মডেল, তাতে শিক্ষার্থীরা রিয়েল লাইফ প্রজেক্টের অভিজ্ঞতা নিয়েই চাকরি শুরু করতে পারে।

পিপলএনটেকের সিইও হানিপ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও অভিনব এক শিক্ষা মডেল তৈরি করা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান। যেই মডেলের মূল লক্ষ্য বেকারত্ব দূর করা ও শিক্ষার্থীদের কম সময়ে আরও দক্ষ করে তোলা। এই মডেল অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম তিন বছর একাডেমিক পড়াশোনা করবে। চতুর্থ বছর থেকে সে তার পছন্দের যেকোন একটি বিষয় বেছে নিয়ে সে বিষয়ে স্পেশালিষ্ট হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে। যেন চাকরিতে প্রবেশ করেই সে মিড লেভেল পর্যায়ের দক্ষতা নিয়ে কাজ করতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশ করার পর যেমন বেকার থাকতে হবে না, তেমনি কোম্পানিগুলোও উপকৃত হবে।

পিপলএনটেকের ২ কোটি টাকার আইটি বৃত্তিতে মোট ৯টি কোর্স রয়েছে। স্কলারশিপের শিক্ষার্থীরা কেউ যদি পরবর্তীতে অ্যাডভানস কোর্স করতে চায় তবে সেক্ষেত্রে তারা ৫০% স্কলারশিপের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। যারা এবার আবেদন করে স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হননি, ভবিষ্যতে পিপলএনটেকের যে কোন স্কলারশিপের ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

প্রধান অতিথি হোসেনে আরা বেগম পিপলএনটেকের এমন উদ্যোগের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে যেকোন প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। সেই সাথে তিনি তথ্য প্রযুক্তি বিকাশে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি নিজে হয়তো আমার প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বাইরে এমন ভাল কাজ করার সামর্থ্য রাখি না যেমনটি পিপলএনটেক করার চেষ্টা করছে। তবে যারা ভাল কাজ করে তাদেরকে সহযোগীতা করতে আমি প্রাণপণ চেষ্টা করি। সেই কারণে কোভিড রিকোভারি স্কলারশিপ নামের এই উদ্যোগে ২ হাজার শিক্ষার্থীকে আইটি প্রশিক্ষণ দেবার এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।

‘আমরা শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি করছি। ৭টি ইনকিউবেশন সেন্টারের মাধ্যমে বর্তমানে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীকে আমরা প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আরেকটি ইনকিউবেশন সেন্টারে ২ হাজার মোট, ১৬ হাজার জনকে ট্রেনিং দিচ্ছি, যার মধ্যে ৫ হাজার জনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ২১০০ জনের ট্রেনিং চলছে এবং আমরা আগামী সপ্তাহে নতুন ব্যাচ শুরু করার জন্য আবার বিজ্ঞপ্তি দিতে যাচ্ছি। সেখানে প্রযুক্তি সম্পর্কিত কোর্সে ট্রেনিং থাকবে, ট্রাবলশ্যুটের ওপর থাকবে সাথে যার যেই দিকে মনোযোগ আছে যেমন মেশিন লার্নিং, আইওটি ইত্যাদি নিয়ে আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি।’

তথ্যসূত্র : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post অদ্ভুত হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ক্র্যাশ হচ্ছে ফোন
Next post ബഹിരാകാശത്തേക്ക് ക്യാമെറ അയച്ചാൽ എങ്ങനെ ഉണ്ടാകും ?